ইয়াবা আসক্তদের শারীরিক_সমস্যা
Health News#ইয়াবা_কি ?
থাইল্যান্ডে এর নাম ম্যাড ড্রাগ, ইন্ডিয়াতে নাম ভুলভুলাইয়া আর বাংলাদেশে
বাবা এছাড়াও নাজি, স্পিড, হিটলার্স ড্রাগ, চকোলি নামেও এটি পরিচিত। এই ঘোড়ার ট্যাবলেট
পরবর্তীতে প্রচন্ড কায়িক শ্রম করে এমন মানুষরা নেয়া শুরু করে এবং এরপর এটা থাইল্যান্ড
ও ভিয়েতনামের প্রষ্টিটিউটরা নিতে শুরু করে। বার্মা এর মূল তৈরির স্থান হলেও তারা কেবল
এক্সপোর্ট করে, সেবনকারীর সংখ্যা সেখানে কম কারন তারা জানে জিনিসটা কি এবং কতটা খারাপ।
#যেভাবে তৈরি হয়
মূলত মেথঅ্যামফেটামিন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণে তৈরি হয় ‘ইয়াবা’। আগে ওষুধ তৈরিতে
অ্যামফেটামিন ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে যে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি হয়, তাতে মেশানো হয় হাইড্রোক্লোরিক
এসিড, এসিটোন (নেইলপলিশ রিমুভার), রেড ফসফরাস, ব্যাটারির লিথিয়াম, সালফিউরিক এসিড ইত্যাদি।
কখনো কখনো এর সঙ্গে হেরোইন মেশানো হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি ২৫ থেকে ৩৫ মিলিগ্রামের
ট্যাবলেট আকারে তৈরি হয়। তরুণ-তরুণীদের কাছে ইয়াবা আকর্ষণীয় করে তুলতে এর মূল উপাদানের
সঙ্গে মেশানো হয় আঙুর, কমলা বা ভ্যানিলার ফ্লেভার; সবুজ বা লাল-কমলা রং। ইয়াবা নামের
ছোট্ট এ ট্যাবলেট দেখতে অনেকটা ক্যান্ডির মতো, স্বাদও তেমনই। ফলে আসক্তরা এর প্রচণ্ড
ক্ষতিকর প্রভাবটুকু প্রথমে বুঝতে পারে না।
#ইয়াবায়_ক্ষতি
ইয়াবার মতো মারাত্মক ক্ষতিকারক মাদক দীর্ঘদিন গ্রহণ করার কারণে দ্রুতগতিতে
মানুষের জীবনধারার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়া এই আসক্তির কারণে শারীরিক
ও মানসিক—দুই ধরনের মারাত্মক ক্ষতিও হয়।
#শারীরিক_সমস্যা
যৌন চাহিদার পরিবর্তন : প্রচণ্ড যৌন উত্তেজক ক্ষমতা রয়েছে বলে অনেকে ইয়াবা
ব্যবহার করে। আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে এটি ছেড়ে দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন
ইয়াবা ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না। প্রথমে কম ডোজে এ ট্যাবলেট কাজ করলেও ধীরে ধীরে
ডোজ বাড়াতে হয়। ইয়াবা গ্রহণের শুরুর দিকে সাময়িক যৌন উত্তেজনা বাড়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে
যৌনক্ষমতা লোপ পায় বা একেবারেই ধ্বংস হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত
হয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতাও বিনষ্ট হয়। নারীদেরও ঋতুস্রাবে সমস্যা হয় এবং ক্রমান্বয়ে
তাদের যৌন চাহিদা কমতে শুরু করে।
#মস্তিষ্কের_সমস্যা : মেথঅ্যামফেটামিন ও ক্যাফেইন দুটিই
মস্তিষ্কের উত্তেজক পদার্থ, যা সেবনকারীকে বেপরোয়া করে দেয়। ইয়াবা সেবনে মস্তিষ্কের
কিছু ছোট রক্তনালি নষ্ট হতে পারে। দীর্ঘদিন সেবনে অল্প বয়সেও ব্রেনস্ট্রোক করে প্যারালাইজড
হওয়া বা চলাচলে অক্ষম হওয়ার আশঙ্কা ৯৫ শতাংশ।
#মাথা_ব্যথা : তীব্র মাথা ব্যথা হয় বা মাথা ধরে।
#দৃষ্টিশক্তি_কমে_যায় : চোখের মণি প্রসারিত (ডায়ালাইটেড)
হয়। দৃষ্টি আস্তে আস্তে কমে যায় বা নষ্ট হয়।
#স্মৃতিশক্তি_নষ্ট : কোনো কিছু মনে রাখতে পারে না বা ভুলে
যায়। কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায় বা আগ্রহ থাকে না।
#ক্ষুধা_নষ্ট : ইয়াবার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হলো ক্ষুধা
কমে যাওয়া বা ক্ষুধাহীনতা। ফলে আস্তে আস্তে ওজন কমে যায়।
#বুক_ধড়ফড় : মাঝেমধ্যেই বুক ধড়ফড় করে, অস্থিরতায় ভোগে।
বুকে ব্যথা বা হার্টের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
#লিভার_সমস্যা : লিভারসিরোসিস থেকে লিভার ক্যান্সারেও পরিণত
হতে পারে।
#ফুসফুসের_সমস্যা : নাক দিয়ে ধোঁয়া হিসেবে ব্যবহার করায়
ফুসফুসে পানি জমা বা অন্য ক্ষতি হতে পারে।
#কর্মক্ষমতা_হারায় : শরীর প্রচণ্ড অলস হয়ে পড়ে। পড়াশোনা,
দৈনন্দিন কাজকর্মে আগ্রহ কমে যায়, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
#ঘুমের_সমস্যা : এর প্রভাবে কেউ দিনে ঘুমায়, রাতে জেগে থাকে।
কেউ কেউ টানা সাত থেকে ১০ দিন জেগে থাকে, আবার একটানা ঘুমায়।
এ ছাড়া রক্তচাপ বেড়ে যায়. চর্মরোগ, কিডনির সমস্যা, পেটে ব্যথা, দাঁত কালো
হওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি, খিঁচুনি এবং খিঁচুনি থেকে মৃত্যুও হতে পারে।
#মানসিক_সমস্যা
ব্যবহার পরিবর্তন বা মেজাজ বিগড়ে যাওয়া : ইয়াবা আসক্তির ফলে ব্যক্তির ব্যবহারে
আমূল পরিবর্তন ঘটে। মেজাজ বেশ খিটখিটে হয়। আচরণ হয় নিষ্ঠুর, নির্মম ও হিংস্র ধরনের।
অল্পতেই অতিরিক্ত রেগে যায়। বিনা কারণে বেশি কথা বলা শুরু করে। অর্থের জন্য মিথ্যা
কথা বলা, এমনকি চুরি করাও শুরু করে।
#একাকিত্বে_ভোগা : সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। সে সর্বদা মানুষের
কাছ থেকে এমনকি অভিভাবকদের থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করে। একেবারে চুপচাপ স্বভাবের হয়ে
যায়।
#সন্দেহবাতিকতা : অহেতুক সন্দেহবাতিকতা দেখা দেয়। স্ত্রী-সন্তান,
মা-বাবা বা অন্যরা তার ক্ষতি করছে—এমন ধারণা পোষণ করে।
#নেশায়_বুঁদ_হওয়া : কখন আবার ইয়াবা নেবে, সে চিন্তায়
ঘুরপাক খায়, বুঁদ হয়ে থাকে।
#সিজোফ্রেনিয়া ও হ্যালুসিনেশন : কারো ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার
লক্ষণ দেখা দেয়। অনেকে পাগল হয়ে যায়। চোখে উল্টাপাল্টা দেখে। কারো কারো ক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশন
বা গায়েবি আওয়াজ শোনার ঘটনা ঘটে।
#বিষন্নতা : বাইপোলার ডিজিজ বা বিষন্নতা রোগে ভোগে। স্বপ্ন
দেখা শুরু করে, দুশ্চিন্তা তৈরি হয়।
#আত্মহত্যার_প্রবণতা : ডিপ্রেশন বা হতাশাজনিত নানা রকম অপরাধপ্রবণতা
বৃদ্ধি পায়। আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে। অনেকে হঠাৎ আত্মহত্যা করে বসে।
দীর্ঘদিন ‘ইয়াবা’ সেবনে শারীরিক ও মানসিক মারাত্মক জটিলতা তৈরি হয়। এর মরণ
ছোবলে জীবন নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে ইচ্ছা করলে এ নেশা থেকে দূরে থাকা যায়। আসক্তরাও চাইলে
চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ জীবন লাভ করতে পারেন।
ইয়াবার সাথে যারা জড়িত আছেন,তাদেরকে অনুরোধ যে, ইয়াবা ছেড়ে সুন্দর ও সুস্থ
জীবনে ফিরে আসুন।তাহলে উপকৃত হবেন আপনি নিজে,উপকৃত হবে আপনার পরিবার,উপকৃত হবে সমাজ
এবং উপকৃত হবে আমাদের দেশ।