গর্ভাবস্থায় বেশি বমি : করণীয়
Gynecologistগর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে খাবারে অরুচি হওয়া এবং বমি ভাব হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। কখনো কখনো বমি হয়েও যায়। গর্ভধারণের পর থেকেই মেয়েদের শরীরে শুরু হয়ে যায় নানা রকম হরমোনের ওঠানামা।
বিটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডট্রপিন এমনই একটি হরমোন, যার মাত্রা গর্ভাবস্থায়
অনেকগুণ বেড়ে যায়। সংক্ষেপে একে বলে বিটা এইচসিজি। এই বিটা এইচসিজির প্রভাবে খাওয়ায়
অরুচি, মাথা ঘোরা, বমির ভাব হয়। সমস্যা যদি এ পর্যায়েই থাকে, তবে সেটা খুব গুরুতর নয়।
একে বলে মর্নিং সিকনেস। তবে বমি এর বেশি হলে বিপদ।
গর্ভাবস্থায় যদি বমির মাত্রা বেশি হয়, অর্থাৎ দিনে দুই থেকে তিনবার বা আরো
বেশি বমি হয়, শরীরের ওজন ৫ শতাংশের বেশি কমে যায়, এই বমির প্রবণতা যদি ২০ সপ্তাহের
পরও থেকে যায়, তবে তাকে বলে হাইপার এমেসিস গ্র্যাভিডেরাম।
ঝুঁকির কারণ
বেশ কিছুর কারণে হাইপার এমেসিস গ্র্যাভিডেরামের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যেমন
: জোড়া বাচ্চা হলে, মায়ের ওজন বেশি হলে, পাকস্থলীতে এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকলে,
পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এই প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
লক্ষণ
বমি, মাথা ঘোরা, ওজন কমে যাওয়া ছাড়াও এই ক্ষেত্রে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে
পারে। যেমন : মাথাব্যথা, প্রচণ্ড ক্লান্তি, অজ্ঞান ভাব, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া,
রক্তচাপ কমে যাওয়া, হতাশা, দুশ্চিন্তা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, জন্ডিস, হৃদস্পন্দন
বেড়ে যাওয়া।
পরীক্ষা
- প্রস্রাব
পরীক্ষা করে প্রস্রাবে কিটোনবডি দেখা
- রক্তে লবণের
মাত্রা পরীক্ষা
- লিভার এনজাইম
ও বিলিরুবিন পরীক্ষা
- থাইরয়েড
হরমোন পরীক্ষা
- প্রস্রাবের
কালচার পরীক্ষা
- রক্তের
রুটিন পরীক্ষা
- পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি
চিকিৎসা
সাধারণ বমি বা বমি ভাব হলে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই। রোগীকে আশ্বস্ত
করতে হবে। প্রয়োজনে রোগীকে মেক্লিজিন বা অনডেনসেন্ট্রোন জাতীয় বমির ওষুধ দেওয়া যেতে
পারে। এগুলোও গর্ভাবস্থায় নিরাপদ। আদা খেতে পারেন। আদা এ জাতীয় সমস্যায় একটি ঘরোয়া
সমাধান বলে বহুল ব্যবহৃত। তবে আরো কিছু ব্যবস্থা নিতে হতে পারে। প্রয়োজনে হাসপাতালে
ভর্তি করে শিরাপথে স্যালাইন, ইনজেকশনের মাধ্যমে বমি নিরোধক ওষুধ দিতে হবে। সাধারণ বমি
নিরোধক ওষুধ কাজ না হলে স্টেরয়েড দিতে হয়। কোনোভাবে বমি ঠেকানো না গেলে কোনো কোনো সময়
মায়ের জীবন বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করিয়ে ফেলতে হয়।
ডাঃ সোনিয়া আক্তার প্রিয়াংকা